ইলিশ মাছের উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমাজের একটি শ্রেণির মধ্যে ভুল ধারণা প্রচলিত। বাংলাদেশে বছরে তিন লাখ টনেরও বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়, আর রপ্তানি হয় মাত্র গড়ে পাঁচ হাজার টন। তবুও, অনেকেই প্রশ্ন করেন, এত ইলিশ উৎপাদিত হলে সাধারণ মানুষের পাতে তা পৌঁছায় না কেন? কিছু লোক দাবি করে, দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পায় না, অথচ বাইরে ইলিশ রপ্তানি করা হয়।
এই দাবি অনেকটাই ভিত্তিহীন। ইলিশ মাছ কখনোই সাধারণের মাছ ছিল না। যখন এক কেজি ইলিশের দাম ৬০০-৭০০ টাকা ছিল, তখনও এটি একটি বিশেষ শ্রেণির নাগালের বাইরে ছিল। গত ১৬-১৭ বছরে টাকার মূল্যমান কমে গিয়ে বর্তমানে সেই ৭০০ টাকার সমান দাঁড়িয়েছে ১৮০০ টাকা, অর্থাৎ ইলিশের দাম এখনো সেই পুরনো মূল্যের আশেপাশেই রয়েছে। তবে ইলিশের দাম বরাবরই একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থেকেছে এবং থাকবে। এটি কোনো সস্তা মাছ নয় যে হরহামেশা কিনতে পাওয়া যাবে।
ইলিশের মতো দেশের অন্যান্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও আমরা আজ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশ আমদানি নির্ভরশীলতায় অনেকটাই জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, আমাদের বীজ সেক্টরের ৮০% সরঞ্জাম, বাইক, টয়লেট্রিজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এই নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পেতে একদিনে সমাধান সম্ভব নয়, এ জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও সময়।
সরকার বা উপদেষ্টারা ইচ্ছে করলেই রাতারাতি আমদানি বন্ধ করতে পারেন না। দেশের অর্থনীতি এবং সামগ্রিক স্বাবলম্বিতা পুনর্গঠন করতে ধৈর্য সহকারে তাঁদের সময় দিতে হবে। পরিবর্তনের পথে পা বাড়াতে হলে তা পরিকল্পিত ও ধাপে ধাপে হওয়া প্রয়োজন, যেন দেশের অর্থনীতিতে কোনো অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়।