এস আহমেদ ভোর

স্বাগতম! আমার সাইটে আপনাকে আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানাই।
Edit Content
Click on the Edit Content button to edit/add the content.

আমাদের আধুনিক জীবনের পরাজয়

আমাদের আধুনিক জীবনের পরাজয়

আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন প্রকৃতির একান্ত আপনজন। তারা থাকতেন মাটির ঘরে, খেতেন সরল খাদ্য, ব্যস্ত থাকতেন কায়িক পরিশ্রমে। তাদের জীবন ছিল যেন প্রকৃতিরই প্রতিচ্ছবি—সরল, শান্ত, নির্ভীক। আমরা, তাদের উত্তরসূরিরা, আজ শহরের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে বাস করি, পোশাকে ফিরিঙ্গি স্টাইল আর নামের আভিজাত্যে মোড়ানো। কিন্তু এই ভোগবাদী জীবনধারা কি আমাদের প্রকৃত সুখ এনে দিতে পেরেছে, নাকি মুছে ফেলেছে মাটির সুবাস আর সহজিয়া জীবনবোধ?

আমাদের নাম ও সংস্কৃতির বিবর্তন

আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সুন্দর খাঁ, সুরুজ আলি কিংবা ময়েজুদ্দিন। আজ আমাদের নাম ফাহাদ ফারাজ, আনিকা আজিজ বা আহনাফ মুনতাসির—কৃত্রিম আর দুর্বোধ্য। গায়ে হলুদকে বানিয়েছি মাহেন্দি নাইট, কনে নাওয়ানোর আচারকে দিয়েছি ব্রাইডাল শাওয়ার নাম। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে ‘ম্যাশড পটেটো’ ঢুকেছে, ‘মিন্ট লেমনেড’ ঢুকেছে, অথচ হারিয়ে গেছে আলুভর্তা আর লেবুর শরবতের সরল স্বাদ। সংস্কৃতির এই বহিরঙ্গ পাল্টেছে ঠিকই, কিন্তু হারিয়ে গেছে সেই ভেতরের আবেগ, সেই সহজ সরল মাটির গন্ধ।

প্রযুক্তির হাতে সময় বন্দি, সম্পর্ক নির্বাসিত

আগে আমাদের বিনোদনের জন্য ছিল পাঠ্যবইয়ের বাইরের নানা বইপত্র, প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র দেখা, বা একসাথে বসে গল্প করা। আজ আমাদের সবই আছে হাতের মুঠোয়—হাজার পিডিএফ, অনলাইন সিনেমা, কিন্তু কোনোটাতেই আর হৃদয় ডুবিয়ে যাওয়া হয় না। প্রযুক্তি আমাদের সময় নিয়ন্ত্রণ করছে, আর সেই সময়ে আছন্ন হয়ে গেছে আমাদের সম্পর্কগুলো। এখন আমরা পরস্পর মুখোমুখি হলে বলার মতো গল্প খুঁজে পাই না, কারণ আমাদের প্রতিটি গল্প ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলে শেষ।

আধুনিকতায় মোড়ানো নিঃসঙ্গতা

গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছি শান্তির আশায়, স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে। বড়লোক হতে চেয়েছি, যাতে মাটির ঘর ছেড়ে কংক্রিটের বিলাসী ফ্ল্যাটে থাকি। কিন্তু আজ আমরা বিশাল বড় বড় বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটে বন্দি হয়ে শ্বাস নেবার জন্য ছুটে যাই কৃত্রিম রিসোর্টে। গলা-কাটা ভাড়ায় রাত কাটাই, কুঁড়েঘর বানানো সাজানো দৃশ্যে শান্তি খুঁজি। আমাদের মনের গভীরে আজও কোথাও মাটির গন্ধ আর প্রকৃতির আলিঙ্গন রয়েছে—যার সন্ধানে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

শরীরের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব, সেলফ-কন্ট্রাডিকশন

আমরা শ্রমিক হতে চাইনি, তাই দালানের কাজ, মাঠের কাজ ছেড়েছিলাম। এখন সেই পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় স্বাস্থ্যের জন্য। আমরা ট্রেডমিলে দৌড়াই, জিমে গিয়ে মেশিনে ঝুলে থাকি, নাম দেই ওয়ার্কআউট। প্রকৃতির কাছ থেকে দূরে গিয়েও আমাদের শরীরকে সেই হারানো পরিশ্রম ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

উপসংহার: সুখের সন্ধান, না কি হারানো মাটি?

আমরা ভেবেছিলাম আধুনিক প্রযুক্তি, অভিজাত পোশাক, আর আরামদায়ক বাসস্থান আমাদের পূর্ণতা দেবে। কিন্তু প্রকৃতির কাছ থেকে দূরে গিয়ে, সম্পর্ক আর সময়কে বন্দি করে আমরা প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র বদ্ধ খাঁচার আরও গভীরে বন্দী হয়ে পড়েছি। আমাদের এই আধুনিক জীবনধারা, যেখানে সবকিছু হাতে পৌঁছে গেছে, আসলে আমাদের মাটির কাছ থেকে আরও দূরে সরিয়ে নিয়েছে। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে যেই প্রশান্তি পেতেন আমাদের পূর্বপুরুষরা, সেই পরিতৃপ্তি আজ আর আমরা খুঁজে পাই না।

তাহলে, আমরা কি সত্যিই উন্নতি করেছি, নাকি আমরা শুধু একটি মায়াজালে বন্দি? উত্তর খুঁজে বেড়াই হৃদয়ের ভেতরেই—যেখানে সেই মাটির স্পর্শ আজও যেন নীরবে অপেক্ষা করে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

আমার সম্পর্কে
ahmed
এস আহমেদ ভোর

পেশায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী, নেশায় ভ্রমণ বাজ! মননে উদ্যোক্তা, সেবায় রোটারিয়ান।হতে চেয়েছিলাম শব্দ শ্রমিক!

সাম্প্রতিক পোস্ট
বিজ্ঞাপন এর জন্য নির্ধারিত জায়গা
সোশ্যাল মাধ্যমে আমাকে পেতে
ছবির গ্যালারি