এস আহমেদ ভোর

স্বাগতম! আমার সাইটে আপনাকে আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানাই।
Edit Content
Click on the Edit Content button to edit/add the content.

পার্বত্য প্রতিচ্ছবি: বান্দরবানের ভূরাজনীতি ও সীমান্ত বাস্তবতা পর্ব-৩

পার্বত্য প্রতিচ্ছবি: বান্দরবানের ভূরাজনীতি ও সীমান্ত বাস্তবতা পর্ব

চলুন তাহলে শুরু করি পার্বত্য প্রতিচ্ছবি ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্ব — যেখানে আমরা জানবো পাকিস্তান আমলে বান্দরবানের রাষ্ট্রীয় অবহেলা, সামরিকীকরণের সূচনা, এবং পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্বের বীজ কিভাবে তৈরি হয়েছিল।


পার্বত্য প্রতিচ্ছবি

পর্ব ৩: পাকিস্তান আমলে বান্দরবান – অবহেলার ছায়ায় সামরিকীকরণের সূচনা

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে বান্দরবান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল একটি ‘Excluded Area’ —রাষ্ট্রের সীমায় থেকেও মূলধারার বাইরে। সেই অবস্থা অপরিবর্তিতই থেকে যায় পাকিস্তান আমলেও, বরং শুরু হয় নতুন এক বঞ্চনার ধারা।


🗺️ পাকিস্তান রাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান

পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখত ভূরাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল, কিন্তু প্রশাসনিকভাবে অবহেলিত অঞ্চল হিসেবে। তারা পাহাড়িদের প্রতি কোনো স্বীকৃত সাংবিধানিক অধিকার দেয়নি।
এই সময়:

  • পাহাড়িদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ছিল না,
  • তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম (বিশেষত বৌদ্ধ) ছিল উপেক্ষিত,
  • বাঙালি মুসলমান পরিচয়কেই একমাত্র রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হতো।

⚠️ সামরিকীকরণ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার উসকানি

১৯৪৭–৬০ এর দশকে পাকিস্তান সরকার পার্বত্য এলাকায় সেনা ছাউনি তৈরি শুরু করে,
বিশেষ করে বান্দরবানের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায়।
তাদের দৃষ্টিতে,

  • পার্বত্য অঞ্চল ছিল “Untrustworthy Frontier Zone”
  • এবং আদিবাসীরা ছিল “Not Loyal Enough”

এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই শুরু হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর নজরদারি, সেনা উপস্থিতি, এবং স্থানীয় নেতৃত্বকে নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা


👥 জনসংখ্যাগত হস্তক্ষেপ – পাহাড়ে বাঙালির আগমন

১৯৬০ সালের পর থেকে পাকিস্তান সরকার:

  • পার্বত্য অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি মুসলমান বসতি স্থাপন উৎসাহিত করে,
  • “দাম দিয়ে জমি কিনে বসতি গড়া” নীতির মাধ্যমে পাহাড়িদের জমির উপর বাঙালিদের দখল বাড়তে থাকে।

এতে জন্ম নেয়:

  • পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্ব
  • আস্থাহীনতা
  • অভ্যন্তরীণ জাতিগত বৈষম্যের বাস্তবতা

🛤️ কাপ্তাই বাঁধ – উন্নয়নের নামে বিপর্যয়

১৯৬২ সালে কাপ্তাই হ্রদ নির্মাণ পাকিস্তান সরকারের অন্যতম উন্নয়ন প্রকল্প ছিল। কিন্তু এই বাঁধ নির্মাণের ফলে:

  • প্রায় ১০০,০০০ পাহাড়ি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়
  • বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির অনেক পরিবার স্থায়ীভাবে ভূমিহীন হয়ে পড়ে
  • জীবিকা, ফসলি জমি, শিকারভিত্তিক জীবনযাত্রা নষ্ট হয়ে যায়

কিন্তু তাদের পুনর্বাসনের কোনো সরকারি উদ্যোগ ছিল না।


🧭 পাহাড়িদের আত্মপরিচয় সংকটের শুরু

এই সময় থেকেই পাহাড়িদের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি বিচ্ছিন্নতা, অবজ্ঞা ও ক্ষোভ জমতে শুরু করে।

  • তারা উপলব্ধি করে যে, তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের চোখে ‘কম গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক’,
  • তাদের প্রতি নেই সাংবিধানিক অধিকার, নেই সংস্কৃতি রক্ষার চেষ্টা।

এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতের আন্দোলনের ভিত গড়ে দেয়।


🧨 চুপচাপ বিস্ফোরণের প্রেক্ষাপট

পাকিস্তান আমলে পাহাড়িদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, তা ছিল:

  • শব্দহীন, কিন্তু তীব্র
  • মুখর, কিন্তু অস্পষ্ট
  • ভবিষ্যতের জন্য এক ‘Time Bomb’ যার বিস্ফোরণ ঘটবে স্বাধীনতার পর…

🧾 উপসংহার

পাকিস্তান আমলে বান্দরবানের জনগণ রাষ্ট্রের হাতে শুধু অবহেলার শিকার হয়নি, বরং তারা নিরাপত্তার অজুহাতে নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ, এবং জনসংখ্যাগত আক্রমণের শিকার হয়েছে।

এই সময়কালের ইতিহাস যদি আমরা ভুলে যাই, তাহলে আজকের বান্দরবানের সংকটকেও আমরা কখনই পুরোপুরি বুঝতে পারবো না।


👉 পরবর্তী পর্ব (পর্ব ৪):
স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাতের উত্থান (১৯৭২–৯০) নিয়ে আলোচনা করবো—যেখানে শান্তিবাহিনীর উত্থান, বিদ্রোহ, সেনা উপস্থিতি এবং চরম সংকটের বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Pinterest

Leave a Reply

আমার সম্পর্কে
ahmed
এস আহমেদ ভোর

পেশায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী, নেশায় ভ্রমণ বাজ! মননে উদ্যোক্তা, সেবায় রোটারিয়ান।হতে চেয়েছিলাম শব্দ শ্রমিক!

সাম্প্রতিক পোস্ট
বিজ্ঞাপন এর জন্য নির্ধারিত জায়গা
সোশ্যাল মাধ্যমে আমাকে পেতে
ছবির গ্যালারি